এন্ড্রোয়েড ফোনের রুট নিয়ে জামেলা আর না! জেনে নিন রুট এবং কাস্টম রম সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ।
আমরা যারা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ইউজ করি তাদের কাছে কাস্টম রম একটি অতি পরিচিত শব্দ। সময়ের সাথে সাথে স্টক রমের পরিবর্তে কাস্টম রমের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এর কারণ একটাই। আর সেই কারণ হল কাস্টম রমের আকর্ষণীয় সব ফিচার এবং কাস্টমাইজেশন অপশন, যার মজা স্টক রমে নেয়া সম্ভব নয়। তাই অ্যান্ড্রয়েদ ডিভাইস কেনার পর আমরা ডিভাইসের জন্য কাস্টম রমের কথা ভাবি । কিন্তু অ্যাডভান্সড ইউজার ছাড়া কাস্টম রমের সাথে জড়িত অনেক কিছু সম্পর্কে আমাদের অনেকের তেমন ধারণা নেই। তাই কাস্টম রম সম্পর্কিত সকল তথ্য নিয়ে আমার আজকের পোস্ট…
Root কি?http://www.pchelplinebd.com/archives/70251
রুট বা রুটিং মানে একটি এন্ড্রয়েডএন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রায় সবাই বোধহয় একবার হলেও রুট(ROOT) শব্দটার নাম শুনেছেন। অনেকেই আছেন রুট করে মহা আনন্দে এন্ড্রয়েড ফোনের মজা নিচ্ছেন অনেকে হয়ত জানেনই না রুট কি!
রুট বা রুটিং মানে একটি এন্ড্রয়েড ডিভাইসের রুট-লেভেল অ্যাক্সেস পাওয়া। লিনাক্স ইউজাররা এটা ভাল বুঝবেন – আমি উইন্ডোজ ইউজার, আমার মত আম জনতার কাছে রুট হল যে আমার ডিভাইসটির উপর আমার সর্ম্পুণ কর্তৃত্ব স্থাপন করা। কোম্পানী এন্ড্রয়েডের সর্ম্পূণ কর্তৃত্ব ইউজারকে দেয় না।
রুট/Root শব্দটা এসেছে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে। লিনাক্স ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাদের রুট প্রিভিলেজ বা সুপারইউজার পারমিশন আছে তাদেরকে রুট ইউজার বলা হয়। এন্ড্রয়েড তৈরি হয়েছে লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম থেকে। এন্ড্রয়েড ডিভাইসে রুট পারমিশন মানে সিস্টেম ফাইল এডিট করার পারমিশন আদায় করা।
রুট সম্পর্কিত কিছু সংঙ্গা:
রম/ROM মানে Read Only Memory হলেও এক্ষেত্রে রম দ্বারা এন্ড্রয়েডের বিভিন্ন ভাসর্নের অপারেটিং সিস্টেম বুঝায়।ফ্ল্যাশ/Flash করা মানে ডিভাইসটির মধ্যকার অপারেটিং সিস্টেম অপসারণ করে আপনার পছন্দের সিস্টেম বা রম ইন্সটল করা।
স্টক রম বলতে উক্ত ডিভাইসের বিল্ট-ইন অপারেটিং সিস্টেমকে বুঝায়।
কাস্টম রম বলতে ওপেনর্সোস ইউজারদের তৈরীকৃত নানা সুবিধাযুক্ত কাস্টমাইজড রম বুঝায়।
ব্রিক/Brick মানে আপনার ডিভাইসটি ব্যাবহারের অযোগ্য হয়ে যাওয়া!
আনব্রিক/Unbrick মানে ব্রিক হওয়া ফোনকে ঠিক করা/ফাংশনাল করা।
কেন রুট করা থাকে না? :
কথা
হচ্ছে, নিজের ফোনের কেন এডমিনিস্ট্রেটর পারমিশন “আদায়” করে নিতে হবে? কেন
ইচ্ছা করলেই একটা ফাইল ডিলিট করতে পারব না? ফোন ম্যানুফ্যাকচাররা আপনাকে
অনেক সুবিধা দিলেও কিছু সুবিধা/পারমিশন তারা দেয় না। এটা করা হয় ভালোর
জন্যই। কারণ আগে থেকে আপনাকে ফোনের মধ্যে যা ইচ্ছা তাই করার অনুমতি দেওয়া
থাকলে দেখা যাবে আপনি গুরুত্বপূর্ণ একটা ফাইল গায়েব করে দেবেন, অথচ আপনি
শুধু চেয়েছিলেন আপনার ফোন মেমোরি বাড়াতে।এছাড়া আপনি কাস্টমাইজ করতে গিয়ে বা রম ইন্সটল করতে গিয়ে ভুল করলে ফোন ব্রিক করে ফেলতে পারেন। আর ভাইরাস/ম্যালওয়ারের কিছু ঝামেলা হতে পারে। কারণ রুট পারমিশন পেলে আপনি যা ইচ্ছা তাই ইন্সটল করতে পারেন, যার কারণে ম্যালওয়ার ফোনে ঢুকে পড়তে পারে।
এন্ড্রয়েড কেন রুট করবেন?
কেন ঝামেলা করে আপনার এন্ড্রয়েডটিকে রুট করবেন? রুট করলে আপনি যা যা করতে পারবেন তা হল –ᗌ১. রুটিং আপনাকে আপনার এন্ড্রয়েডে ‘সুপার ইউজার’ অধীকার দেয়।
ᗌ২.
ফোনটিতে কি থাকবে আর কি থাকবে না তা নিশ্চিত করতে পারবেন। ডিফল্ট হিষেবে
থাকা অনেক সফ্টওয়ার আপনার পছন্দ নাও হতে পারে। রুট আপনাকে এগুলো Uninstall
বা Replace করার ক্ষমতা দেয়।
ᗌ৩.
এন্ড্রয়েড মার্কেটে ও অন্য সফ্টওয়ার সাইটে পাওয়া যায় অসাধারণ সব
এন্ড্রয়েড সিস্টেম সফ্টওয়ার, যা দিয়ে নানাভাবে ফোনের পারফর্মেন্স
বাড়াতে পারবেন। কিন্তু রুট ছাড়া এসব হয় না।ᗌ৪. অনেক ইনবিল্ট ফিচার যা একটি ডিভাইসে সাপোর্ট করে অথচ অন্য ডিভাইসে হয় না, কিন্তু রুটিঙের মাধ্যমে এগুলো ঠিক করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, লাউভ ওয়ালপেপার Samsung Galaxy Spica তে রুট না করলে চলে না।
ᗌ৫. আপনার ডিভাইসটির WifI বা Bluetooth সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ শেয়ার এবং ওয়াইফাই দিয়ে উচ্চগতিতে ডাটা ট্রান্সফার করতে এনড্রয়েডে ওয়াইফাই/ব্লুটুথ টেথারিং করতে হয়, যার জন্য রুট বাধ্যতামূলক।
ᗌ৬. বিল্ট-ইন না থাকলে ফোনে বাংলা ফন্ট ইন্সটল করতে রুট লাগবে।
ᗌ৭. এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এটাও হয়ত শুনে থাকবেন যে অনেকে কাস্টম রম(Custom ROM) ইন্সটল করে। অনেকে হয়ত কাস্টম রম ইন্সটল করা ফোন দেখে মনে মনে ভেবেছেন আপনিও করবেন। তাহলে আপনাকে রুট করতেই হবে। কাস্টম রম ইন্সটলের প্রধান শর্ত আপনাকে রুট করতে করতে হবে।
ROM হচ্ছে Read Only Memory যা আপনার ডিভাইসটিকে চালায়। নেটে অনেক কাস্টম রম পাবেন যা আপনার ফোনকে শুধু দৃষ্টিনন্দন করে তুলবে তাই নয় ফোনের পারফরম্যান্সও বাড়িয়ে তুলবে। কাস্টম রম ডেভেলপারদের মধ্যে CyanogenMod, Team Rouge, Team EOS, ParanoidAndroid, MIUI ইত্যাদির নাম বেশি শোনা যায়। আপনি ইচ্ছা করলে রম ম্যানেজার দিয়ে আপনার ফোনের সাথে কম্প্যাটিবল রম ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
আর রম খোঁজার জন্য GooManager ও RomManager ব্যবহার করতে পারেন।
কোন রম ভালো এবং রম সম্পর্কে জানতেঃ How to Find Custom Rom for Your Android Phone
ᗌ৮. কোন কোন ফোনের ক্ষেত্রে থিম অর্থাৎ আপনার ফোন যে গ্রাফিক্সটা প্রদর্শন করছে তা পরিবর্তন করার জন্যেও আপনাকে রুট করা লাগতে পারে।
ᗌ৯. এন্ড্রয়েড ডিভাইস রম দিয়ে চললেও, কাজগুলোর কমান্ড বা নির্দেশ দেওয়া হয় কার্নেলের মাধ্যমে। কার্নেল সংশ্লিষ্ট এপ্লিকেশনকে টাচ অনুযায়ী কাজ করতে বলে। আপগ্রেডেড কার্নেল ব্যবহার করে আপনার ফোনের পারফরম্যান্স বাড়ানো সম্ভব।
কার্নেল সম্পর্কে জানতেঃ What is Kernel?
ᗌ১০. রুট করার পরে যদি কাস্টম রম ইন্সটল করেন তবে আপনার ফোন কিভাবে চালাবেন মানে সিপিউ ইউসেজ কেমন অ্যালাউ করবেন তার কিছু অপশন পাবেন। এগুলোর মাধ্যমে আপনার ফোনের সর্বোচ্চ স্পিড ও সর্বনিম্ন ব্যাটারি খরচে পেতে পারেন। আরো জানতে ভিজিট করুন – XDA Forums
► এছাড়া কিছু অ্যাপস আছে যেমনঃ
এগুলো দিয়েও আপনি আপনার সিপিউ ইউসেজ কন্ট্রোল করতে পারবেন। বলাই বাহুল্য ইউজ করার জন্য রুট আবশ্যক।
ᗌ১১. বেসব্যান্ড ওয়্যারলেস সেটিংস( ফোন, ওয়াইফাই, রেডিও) নিয়ন্ত্রণ করেন। এটা আপগ্রেড করা মানে বেটার সার্ভিস পাওয়া।
ᗌ১২. রুট করার আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে ব্যাকআপ তৈরি করা। গুগল হয়ত কিছু ব্যাকআপ সুবিধা দেয় কিন্তু সেটা কন্ট্যাক্টস, ক্যালেন্ডার, জি-মেইল পর্যন্তই। রুট করার মাধ্যমে আপনি আপনার ডিভাইসের সফটওয়ারের একটা হুবহু কপি করে রাখতে পারবেন এপ্লিকেশন সেটিংস সহ!! ধরুন রুট করার পর রম আপগ্রেড করবেন বা কাস্টম রম ইন্সটল করতে মন চাইলো। ইন্সটল করার পরে দেখলেন ভালো লাগছে না। তখন? ব্যাকআপ করা থাকলে সেই ফাইলটি ফ্ল্যাশ করুন, আপনার ডিভাইস ঠিক আগের মত অবস্থায় ফিরে যাবে। আপনার মেমোরি কার্ডের ফাইলগুলো পর্যন্ত ফিরে পাবেন একইরকম ভাবে। এজন্য রুট করার পর যা কিছু করার আগে ব্যাকআপ করে নিন।
এখন কথা হচ্ছে ব্যাকআপ কিভাবে করবেন। যদি Apps ব্যবহার করতে চান তাহলে Titanium Backup এর কথাই আগে আসবে।
আর যদি কাস্টম রিকভারি ইন্সটল করে থাকেন( কাস্টম রম ইন্সটল করতে গেলে, কাস্টম রিকভারি মাস্ট) তাহলে সেখান থেকেও ব্যাকআপ করতে পারেন…
ᗌ১৩. রুট করার পর আপনার ফোনের অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করতে পারবেন, ফোন মেমোরি থেকে স্টক অ্যাপস মেমোরি কার্ডে নিতে পারবেন। আপনার ফোন মেমোরি যত ফাঁকা করতে পারবেন ততই স্পিড বাড়বে।
ᗌ১৪. আপনি যদি একজন এন্ড্রয়েড ডেভেলপার হন বা কাস্টম রম/রিকাভারি বানাতে চান তাহলেও আপনাকে রুট করতে হবে। কাস্টম রম/ রিকভারি স্টক রম/রিকভারির উপর ভিত্তি করেই বানানো হয়। আর স্টক ফাইল এক্সট্রাক্ট করতে আপনার সুপার ইউজার(SuperUser/SU) মানে রুট পারমিশন লাগবে।
রুটিং এ রিস্ক বা অসুবিধা কি কি?:
রুটিং
করতে নানাবিধ ঝামেলা পোহাতে হয়। আপনি যদি না জানেন আপনি কি করছেন তাহলে
রুট না করাই ভালো। না বুঝে যদি রুট করতে চান তাহলে যে বিপদ গুলো হতে পারেঃ১. যদি ভুল রম ইন্সটল করেন যেটা আপনার ফোনের সাথে কম্প্যাটিবল না বা রুট প্রসেসের কোন ধাপ অসাবধানতাবশত ভুল করে ফেললে বা বাংলাদেশে যেটা হতে পারে- মাঝখান দিয়ে কারেন্ট চলে গেলে (যার কারণে আমি আমার Symphony Xplorer W20 বহুত ভয়ে ভয়ে রুট করেছি) আপনার ডিভাইসটি ব্রিক হয়ে যেতে পারে। ব্রিক মানে জানতে এই পোষ্টের প্রথমদিকে দেখুন।
২. ওয়ারেন্টি থাকাকালীন সময়ে রুট করলে আপনার ডিভাইসের ওয়ারেন্টি ভয়েড বা নষ্ট হবে। তবে এখন কিছু কিছু ফোনে ওয়ারেন্টি ফিরিয়ে আনার পদ্ধতি পাওয়া যায়।
৩. এছাড়া ভাইরাসের কিছু ভয় আছে। সেটার রোধ করতে এন্ড্রয়েডের জন্য পাওয়া যায় এমন নানা এন্টিভাইরাস ব্যাবহার করতে পারেন।
আশা করি Root সম্পর্কে একটা ধারনা দিতে পেরেছি।
FreedomPop is the #1 FREE mobile communications provider.
উত্তরমুছুনVoice, text and data plans starting at £0.00/month (100% FREE).